ঈশ্বর কি?

ঈশ্বরকে আদৌ সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বা সংজ্ঞায়িত করা কি আদৌ সম্ভব? ঈশ্বরের সংজ্ঞাবোধ ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঈশ্বরতত্ত্বীয় ধারণা দেওয়া হয়েছে সেমেটিক ধর্মগুলোতে। এক্ষেত্রে ঈশ্বরের রূপায়নে নির্বুদ্ধিতার ক্ষেত্রে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করেছে ইসলাম, ক্রিশ্চিয়ানিটি এবং জুদাইজমের মধ্যে।

ইসলাম ধর্মে ঈশ্বর একজন পক্ষপাতদুষ্ট নারীবিদ্বেষী, ইহুদিবিদ্বেষী, জেনোসাইডাল ম্যানিয়াক গণহত্যাকারী, যার ঠিক মানুষের ন্যায় রাগ-গোস্বা, হাসি-আনন্দ ইত্যাদি সব রকমের মানবীয় অনুভূতিই আছে। ক্রিশ্চিয়ানিটিতে ঈশ্বর আরোও বেশি হাস্যকর যিনি মানুষকে পাপ করার সুযোগ দেন আবার সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে নিজেকে নিজেই মানুষের দ্বারা খুন করান। ইহুদী ধর্মে ঈশ্বর শুধু তার গড চুজেন পিপল ইহুদীদের নিয়েই ব্যস্ত তাই তিনি আর কাউকে চেনেননা জানেননা।

মরু অঞ্চলে খাদ্য-পানীয় এবং সম্পদের অভাব হওয়ায় অন্যের সম্পদ ঈশ্বরের ভয় দেখিয়ে লুটে খেতে কিংবা গ্রুপ তৈরি করে কেড়ে নিতেই সকল আরব ধর্মের উৎপত্তি। আরব ধর্মগুলোকে একেকটা মাফিয়া গ্যাং বলা যায় যারা নিজেদের পক্ষে ঈশ্বর তত্ত্ব জুড়ে দিয়ে ধর্মের আকৃতি নিয়েছে।

ঈশ্বরতত্ত্ব নিয়ে সবচেয়ে সুক্ষ্মদর্শী আধুনিকতম পরিপূর্ণ গবেষণা এবং সংজ্ঞায়ন পাওয়া যায় ভারতীয় ধর্মসমূহে যেগুলোর সামগ্রিক প্রচলিত নাম হলো হিন্দুইজম, যার মধ্যে বুদ্ধিইজম অন্তর্ভুক্ত এবং সবচেয়ে নিখুঁত প্রায়োগিক আলোচনাও হয়েছে বুদ্ধিইজমে।

সম্ভব্য সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই শ্বরবাদ, নিরীশ্বরবাদ, অজ্ঞেয়বাদ, নাস্তিক্যবাদ, সর্বেশ্বরবাদসহ সব সম্ভাব্য তত্ত্বীয় ঈশ্বরতত্ত্ব নিয়ে তুলনামূলক পরিপূর্ণ ধারণা এবং গভীরতম আলোচনা পাওয়া যায় প্রাচীন ভারতবর্ষীয় দর্শনশাস্ত্রে বা হিন্দুইজমে। অথচ বর্তমানে স্বয়ং হিন্দুরাই সেইসব জ্ঞানগর্ভ গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দর্শনশাস্ত্র এবং জ্ঞানগবেষণা ভুলে প্রাচীন রূপকথা-উপকথামূলক কল্পকাহিনীকে হিন্দুইজম ভেবে মূর্তির পায়ে মাথা ঠুকরাচ্ছে।

হিন্দুইজমে ইসলামের দাসব্যবসায়ী নবীর মতো কোনো বাস্তব ঐতিহাসিক চরিত্র সেন্ট্রাল ফিগার হিসেবে নেই। হিন্দুইজমকে তাই ইসলাম এমনকি অন্যান্য সেমেটিক ধর্মের সাথেও তুলনা করা যায়না।

ইসলামের নবীর মৌখিক এবং ব্যবহারিক নির্দেশাবলী যা কোরান-হাদিস নামে প্রচলিত তাই ইসলামী আইন এবং সমাজ ব্যবস্থার একমাত্র উৎস। একক অপরিবর্তনীয় উৎসকেন্দ্রিক হওয়ায় ইসলাম ধর্মের মৌলিক আইন যেমন, অমুসলিমদের অভিশপ্ত পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট হিসেবে ঘৃণা করা, বউ পেটানো, নারীদের নিকৃষ্ট মনে করা, ইসলাম ত্যাগের কারণে খুন, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি কখনোই সংস্কার করা যাবেনা। এককথায় ইসলাম কখনোই সংশোধিত হওয়ার নয়। ইসলামকে সবদিক থেকে সর্বাত্মক আঘাত করতে করতে বিলুপ্ত হতে বাধ্য করাটাই মানবতাকে ইসলামের থাবা থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায়।

অনেক মুক্তমনাকেই দেখি ইসলাম ধর্মের সাথেসাথে ভারসাম্য ঠিক রাখতে হিন্দু ধর্মেরও সমালোচনা করতে চেষ্টা করেন। দুঃখজনকভাবে তাদের সমালোচনার ধরণের সনাতন ধর্ম সম্পর্কে তাদের স্টেরিওটিপিক্যাল অজ্ঞানতাই শুধু প্রকাশ পায়। প্রায় সবক্ষেত্রেই এইসব মুক্তমনারা সনাতন ধর্মীয় দর্শন এবং প্রাচীন ভারতীয় পৌরাণিক উপকথা নির্ভর আচারবিচার, এই দুটোতে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। হিন্দুইজম বা সনাতন ধর্ম নামে আপাত যা আছে তা তা আসলে এককেন্দ্রিক সংঘবদ্ধ ধর্ম নয় বরং প্রচলিত সংজ্ঞায়নে ধর্মই নয়।

হিন্দুইজম হচ্ছে সমগ্র ভারতবাসীর হাজারহাজার বছরের বহুমুখী, বহুধারায় বিভক্ত আধ্যাত্মিক অর্জন তথা অভিজ্ঞান-অভিজ্ঞতার সমষ্টি এবং সেই অনুসারে তাদের জীবনপদ্ধতি। মৌলিক সনাতন ধর্মের বহুবিস্তৃত শাখায় মৌলিক সৃষ্টিতত্ত্বীয় দর্শনের সবগুলো উপাদানই পাওয়া যাবে। আপনি খুঁজলে সর্বেশ্বরবাদ, অজ্ঞেয়বাদ, নিরিশ্বরবাদ সবই পাবেন।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে পৌরাণিক উপকথা / কাব্যসাহিত্যনির্ভর জীবনাচরণও কালের আবর্তে সনাতনী দর্শনের সাথে মিশে গিয়ে একটা বিশ্রী রূপ দাড় করিয়েছে। পৌরাণিক গল্প নির্ভর চরম হাস্যকর, নোংরা আচারবিচার যেগুলো কালক্রমে হিন্দুইজমের সাথে মিশে হিন্দু ধর্মের অংশ হয়ে গেছে সেগুলো বর্তমান বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে শুধু বেমানানই নয় বরং জঘন্য অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।

হিন্দুইজমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সুবিস্তৃত এই জীবন দর্শনে সৃষ্টিতত্ত্বীয় এবং নৈতিক দর্শনের সকল শাখায় উপস্থিত থাকায় হিন্দুইজমে বিশ্বাসীরা মুক্তভাবে নিজেদের কনসায়েন্স ব্যবহার করে নিজেদের পছন্দমতো দর্শন এবং জীবনাচরণ বেছে নিতে পারে, যেটি ইসলামে পারবেনা। তাই শিক্ষিত মুসলিমরা শুধু নামে মাত্র মুসলিম। ইসলাম ত্যাগের শাস্তি মৃত্যূদন্ড – এজন্যেই ইসলাম টিকে আছে। নইলে অনেক আগেই পৃথিবী থেকে ইসলামের নাম নিশানা উঠে যেত। এখন পর্যন্ত ইসলাম সম্পর্কে ভীতি আছে, ঘৃণা আছে, কৌতুক আর রশিকতা আছে, কিন্তু শ্রদ্ধা বা সন্মান নেই বললেই চলে।

– সংগৃহিত

Leave a comment